কবি ও কথাসাহিত্যিক
আনিসুল হকের জন্ম রংপুর বিভাগের নীলফামারীতে। তাঁর পিতার নাম মোফাজ্জল হক এবং মাতার নাম মোসাম্মাৎ আনোয়ারা বেগম। আনিসুল হক বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ সরকারের রেলওয়ে বিভাগে যোগদান করেন। অল্প কিছুদিন চাকরির পরই তা ছেড়ে দিয়ে সাংবাদিকতায় চলে আসেন। তিনি ১৯৮৭ সালে সাপ্তাহিক দেশবন্ধু পত্রিকার সহসম্পাদক, ১৯৮৯ সালে সাপ্তাহিক পূর্বাভাস পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক, ১৯৯১ সালে সাপ্তাহিক খবরের কাগজের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হন। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত দৈনিক ভোরের কাগজের সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত দৈনিক প্রথম আলোর সাথে যুক্ত আছেন। তিনি কিশোর আলোর সম্পাদক। তাঁর মূল ঝোঁক লেখালেখিতে। পত্রিকায় তিনি নিয়মিত কলাম লেখেন। বুয়েটে পড়ার সময় কবিতার দিকে বেশি ঝোঁক ছিল। পরবর্তীতে এর পাশাপাশি কথাসাহিত্যেও মনোযোগী হন। উপন্যাস, বিদ্রূপ রচনা, নাটক রচনায় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। ২০১০ সালে তিনি আমেরিকার ইন্টারন্যাশনাল রাইটিং প্রোগ্রাম (আইডব্লিউপি) কর্মশালায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লেখকদের সাথে যোগ দেন। তিনি ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৩৭ জন লেখক আইডব্লিউপির কর্মশালায় যোগ দেন। ১৯৬৭ সাল থেকে শুরু হওয়া এ আয়োজনে ২০১০ সাল পর্যন্ত ১৩০টি দেশের এক হাজার ২০০ লেখক অংশ নেন।
গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব
বাংলাদেশের গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের মাঝে ত্রপা মজুমদার একটি উজ্জ্বল নাম। মঞ্চ, টিভি ও বেতার নাটকে তাঁর উপস্থিতি সবসময়ই এক বিশেষ মাত্রা যোগ করে থাকে। শুধু নাট্যাঙ্গনে নয় শিক্ষা ক্ষেত্রেও তাঁর সফলতা অনুকরণীয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে বি. এ (সম্মান) শ্রেণীতে প্রথম বিভাগে তৃতীয় ও এম. এ-তে তিনি প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান লাভ করেন। কর্মজীবনে তিনি বিজ্ঞাপনী সংস্থা এক্সপ্রেশানস লিমিটেড-এর পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক। বাংলাদেশের বাইরে ভারত, সিঙ্গাপুর ও ইংল্যান্ডে ত্রপা মজুমদার অভিনীত ও নির্দেশিত নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। তাঁর অভিনীত মঞ্চ নাটকগুলোর মধ্যে আছে- বিষলক্ষ্যার ছুরি, চিরকুমার সভা, দ্যাশের মানুষ, স্পর্ধা, মেরাজ ফকিরের মা, তোমরাই, পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, এখনও ক্রীতদাস, সুবচন নির্বাসনে, আন্তিগোনে, কৃষ্ণকান্তের উইল, তাহারা তখন, স্বপ্নগিরি, ছয় বেহারার পালকি, মাধবী, বারামখানা, মুক্তধারা, অন্ধকারে মিথেন, মায়ানদী ও ধলেশ্বরী অপেরা। অভিনয়ের পাশাপাশি ত্রপা মজুমদার নাট্য নির্দেশনার সাথেও যুক্ত। তাঁর নির্দেশিত নাটকগুলো হলো- ছয় বেহারার পালকি (যৌথ নির্দেশনা), মুক্তি, বারামখানা ও কুহকজাল। ত্রপা মজুমদার তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে চক্রবাক পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার, তনুশ্রী পদক, দীপু স্মৃতি পদক, বাংলাদেশ কালচারাল রিপোর্টারস এসোসিয়েশান পদক, এস এম সোলায়মান প্রণোদনা বৃত্তি, ফৌজিয়া ইয়াসমিন পদকসহ অনেক পদক ও পুরস্কার লাভ করেছেন।
শিক্ষাবিদ, ভাষাচিন্তক
ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে ২০২১ সালের ১৯শে ডিসেম্বর থেকে কর্মরত আছেন। তিনি মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। বাংলায় স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর প্রথম শ্রেণি প্রাপ্ত সৌমিত্র শেখর আইসিসিআর স্কলারশিপ নিয়ে পিএইচ.ডি. ডিগ্রি অর্জন করেন পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তিনি জন্মেছেন ময়মনসিংহ জেলার শেরপুরে। শেরপুর অবশ্য এখন পৃথক জেলা হিসেবে স্বীকৃত। ডক্টর শেখর বিসিএস পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ। কর্মজীবন শুরু করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে লেকচারার হিসেবে। কিন্তু এর এক বছর পরেই তিনি যোগদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। টানা ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি অধ্যাপনা করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি অনেক জনপ্রিয় শিক্ষক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রতিবার তিনি জয়ী হয়েছেন। ডক্টর সৌমিত্র শেখর বাংলাদেশের প্রথিতযশা নজরুল গবেষক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের একাধিকবার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র অর্থাৎ টিএসসির উপদেষ্টা পদে তিনি দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। গবেষণা ও শিক্ষকতার পাশাপাশি ডক্টর সৌমিত্র শেখর মিডিয়াতেও জনপ্রিয় মুখ। শিক্ষা ও উন্নয়নমূলক অনুষ্ঠানে বেতার ও টেলিভিশনে তিনি নিয়মিত অংশগ্রহণ করে থাকেন। তিনি বাংলাবিদ্যার জগতে, বিশেষ করে গবেষণার ক্ষেত্রে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। দেশ ও দেশের বাইরে গবেষণামূলক পত্রপত্রিকায় তাঁর বহু প্রবন্ধ ও গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কয়েকটি গ্রন্থের নাম এখানে উল্লেখ করা চলে : গদ্যশিল্পী মীর মশাররফ, নজরুল-কবিতার পাঠভেদ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ, কথাশিল্প অন্বেষণ, সত্যেন সেনের উপন্যাসে জীবন ও শিল্পের মিথস্ক্রিয়া, ষাটের কবিতা: ভালোবাসার শরবিদ্ধ কবিকুল, ভাষার প্রাণ ভাষার বিতর্ক, নজরুল: আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি ও শিল্পীর বোধ, মোসলেম ভারত: বিষয় বিশ্লেষণ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে, বঙ্গবন্ধু জিজ্ঞাসা ইত্যাদি। গবেষণা ও অন্যান্য কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিনস অ্যাওয়ার্ড, ময়েনউদ্দিন ফাউন্ডেশন পদক, নজরুল পদক লাভ করেন।