সর্বশেষ

 

 
পঞ্চম বর্ষের বিচারকমণ্ডলী
Imdadul Haq Milan judge image

ইমদাদুল হক মিলন

কথা সাহিত্যিক ও নাট্যকার

কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন ১৯৫৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বিক্রমপুরের মেদিনীমণ্ডল গ্রামে নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস মুন্সীগঞ্জ বিক্রমপুরের লৌহজং থানার পয়সা গ্রামে। তাঁর বাবার নাম গিয়াসুদ্দিন খান এবং মার নাম আনোয়ারা বেগম। তিনি ১৯৭২ সালে লৌহজং উপজেলার কাজীর পাগলা হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৭৪ সালে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি ১৯৭৯ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকেই স্নাতক (সম্মান) সম্পূর্ণ করেন।

তিনি গল্প, উপন্যাস এবং নাটক এই তিন শাখাতেই জনপ্রিয় রচনা উপহার দিয়েছেন। কিশোর বাংলা নামীয় পত্রিকায় শিশুতোষ গল্প লিখে তার সাহিত্যজগতে আত্মপ্রকাশ। ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে সাপ্তাহিক বিচিত্রা পত্রিকায় '‍সজনী‌'‍ নামে একটি ছোট গল্প লিখে পাঠকের দৃষ্টি আর্কষণ করতে শুরু করেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০১৯ সালে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।

ইমদাদুল হক মিলন লেখক হিসেবে এপার-ওপার দুই বাংলায়ই তুমুল জনপ্রিয়। দুই বাংলায়ই তার 'নূরজাহান' উপন্যাসটি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তিনি দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক।

তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ২ শত। অধিবাস, পরাধীনতা, কালাকাল, বাঁকাজল, নিরন্নের কাল, পরবাস, কালোঘোড়া, মাটি ও মানুষের উপাখ্যান, পর, কেমন আছ সবুজপাতা, জীবনপুর প্রভৃতি তাঁর বিখ্যাত বই। তাঁর লেখা দেড়শতাধিক নাটকের মধ্যে কোন কাননের ফুল, বারো রকম মানুষ, রূপনগর, যুবরাজ, কোথায় সেজন, আলতা, একজনা, নীলু, তোমাকেই, ছোছা কদম, আঁচল, খুঁজে বেড়াই তারে, কোন গ্রামের মেয়ে, মেয়েটি এখন কোথায় যাবে, বিপুল দর্শকপ্রিয়তা পায়।

কথাসাহিত্যে অনবদ্য অবদান রাখায় অন্যান্য অনেক পুরস্কার ও সম্মাননার পাশাপাশি তিনি 'চিত্তরঞ্জন দাশ স্বর্ণপদক' লাভ করেন। এছাড়াও ২০০৬ সালে জাপান ফাউন্ডেশন আয়োজিত 'তাকেশি কায়েকো মেমোরিয়াল এশিয়ান রাইটারস লেকচার সিরিজে' বাংলাভাষার একমাত্র লেখক হিসেবে তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। জাপানের চারটি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে তিনি বাংলাদেশের সাহিত্য এবং তার নিজের লেখা নিয়ে বক্তৃতা করেন। এশিয়ার লেখকদের জন্য এ এক বিরল সম্মান। এছাড়াও তিনি পেয়েছেন ভারতের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার আইআইপিএম-সুরমা চৌধুরী মেমোরিয়াল ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড।

Tropa Majumdar judge photo

ত্রপা মজুমদার

গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব

বাংলাদেশের গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের মাঝে ত্রপা মজুমদার একটি উজ্জ্বল নাম। মঞ্চ, টিভি ও বেতার নাটকে তাঁর উপস্থিতি সবসময়ই এক বিশেষ মাত্রা যোগ করে থাকে। শুধু নাট্যাঙ্গনে নয় শিক্ষা ক্ষেত্রেও তাঁর সফলতা অনুকরণীয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে বি. এ (সম্মান) শ্রেণীতে প্রথম বিভাগে তৃতীয় ও এম. এ-তে তিনি প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান লাভ করেন। কর্মজীবনে তিনি বিজ্ঞাপনী সংস্থা এক্সপ্রেশানস লিমিটেড-এর পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক।

বাংলাদেশের বাইরে ভারত, সিঙ্গাপুর ও ইংল্যান্ডে ত্রপা মজুমদার অভিনীত ও নির্দেশিত নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। তাঁর অভিনীত মঞ্চ নাটকগুলোর মধ্যে আছে- বিষলক্ষ্যার ছুরি, চিরকুমার সভা, দ্যাশের মানুষ, স্পর্ধা, মেরাজ ফকিরের মা, তোমরাই, পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, এখনও ক্রীতদাস, সুবচন নির্বাসনে, আন্তিগোনে, কৃষ্ণকান্তের উইল, তাহারা তখন, স্বপ্নগিরি, ছয় বেহারার পালকি, মাধবী, বারামখানা, মুক্তধারা, অন্ধকারে মিথেন, মায়ানদী ও ধলেশ্বরী অপেরা। অভিনয়ের পাশাপাশি ত্রপা মজুমদার নাট্য নির্দেশনার সাথেও যুক্ত। তাঁর নির্দেশিত নাটকগুলো হলো- ছয় বেহারার পালকি (যৌথ নির্দেশনা), মুক্তি, বারামখানা ও কুহকজাল।

ত্রপা মজুমদার তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে চক্রবাক পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার, তনুশ্রী পদক, দীপু স্মৃতি পদক, বাংলাদেশ কালচারাল রিপোর্টারস এসোসিয়েশান পদক, এস এম সোলায়মান প্রণোদনা বৃত্তি, ফৌজিয়া ইয়াসমিন পদকসহ অনেক পদক ও পুরস্কার লাভ করেছেন।

Dr. Soumitra Sekhar judge image

অধ্যাপক ডক্টর সৌমিত্র শেখর

শিক্ষাবিদ, ভাষাচিন্তক

ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে ২০২১ সালের ১৯শে ডিসেম্বর থেকে কর্মরত আছেন। তিনি মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। বাংলায় স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর প্রথম শ্রেণি প্রাপ্ত সৌমিত্র শেখর আইসিসিআর স্কলারশিপ নিয়ে পিএইচ.ডি. ডিগ্রি অর্জন করেন পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তিনি জন্মেছেন ময়মনসিংহ জেলার শেরপুরে। শেরপুর অবশ্য এখন পৃথক জেলা হিসেবে স্বীকৃত। ডক্টর শেখর বিসিএস পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ। কর্মজীবন শুরু করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে লেকচারার হিসেবে। কিন্তু এর এক বছর পরেই তিনি যোগদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। টানা ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি অধ্যাপনা করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি অনেক জনপ্রিয় শিক্ষক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রতিবার তিনি জয়ী হয়েছেন। ডক্টর সৌমিত্র শেখর বাংলাদেশের প্রথিতযশা নজরুল গবেষক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের একাধিকবার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র অর্থাৎ টিএসসির উপদেষ্টা পদে তিনি দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। গবেষণা ও শিক্ষকতার পাশাপাশি ডক্টর সৌমিত্র শেখর মিডিয়াতেও জনপ্রিয় মুখ। শিক্ষা ও উন্নয়নমূলক অনুষ্ঠানে বেতার ও টেলিভিশনে তিনি নিয়মিত অংশগ্রহণ করে থাকেন। তিনি বাংলাবিদ্যার জগতে, বিশেষ করে গবেষণার ক্ষেত্রে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। দেশ ও দেশের বাইরে গবেষণামূলক পত্রপত্রিকায় তাঁর বহু প্রবন্ধ ও গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কয়েকটি গ্রন্থের নাম এখানে উল্লেখ করা চলে : গদ্যশিল্পী মীর মশাররফ, নজরুল-কবিতার পাঠভেদ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ, কথাশিল্প অন্বেষণ, সত্যেন সেনের উপন্যাসে জীবন ও শিল্পের মিথস্ক্রিয়া, ষাটের কবিতা: ভালোবাসার শরবিদ্ধ কবিকুল, ভাষার প্রাণ ভাষার বিতর্ক, নজরুল: আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি ও শিল্পীর বোধ, মোসলেম ভারত: বিষয় বিশ্লেষণ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে, বঙ্গবন্ধু জিজ্ঞাসা ইত্যাদি। গবেষণা ও অন্যান্য কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিনস অ্যাওয়ার্ড, ময়েনউদ্দিন ফাউন্ডেশন পদক, নজরুল পদক লাভ করেন।